আজ ১৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

badc

বিএডিসির ডোমার ভিত্তি বীজআলু উৎপাদনের খামারে এবার আউশ ধান


জমি পতিত না রাখার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বিএডিসির ডোমার ভিত্তি বীজআলু উৎপাদনের খামারে এবার উৎপাদন হয়েছে আউশ ধানের ভিত্তি বীজ।
শুধুমাত্র বীজআলু উৎপাদনের ওই খামারটি প্রথমবারের মতো ২৪০ একর জমিতে আবাদ করেছে আউশ ধান। যা থেকে ৩৫০ টন ভিত্তি ধান বীজ উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খামার কতৃপক্ষ বলছেন, ওই পরিমাণ বীজ দিয়ে আউশ আবাদ করা যাবে ৩৫ হাজার একর জমি। এছাড়াও অবীজ ধান পাওয়া যাবে প্রায় ৭০ টন। যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকার ওপরে। অসময়ে ধানের ব্যাপক আবাদে চমক সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। মাঠভরা পাকা ধান দেখে এলাকার কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন আউশ আবাদে।
ভিত্তি বীজআলু উৎপাদনের জন্য ৬৫০ একর জমিতে বিএডিসির বিশেষায়িত খামার এটি। প্রতিবছর আলু আবাদের পর সীমিত আকারে গম চাষ হতো। এরপর দীর্ঘ একটি সময় এসব জমি পতিত থাকতো। ‘এক ইঞ্চি জমি পতিত থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশনায় এবার ২৪০ একর জমিতে আউশের ভিত্তি বীজ উৎপাদনে বিনা-২১, ব্রি-৪৮ ও ব্রি-৯৮ জাতের ধানের আবাদ করা হয়। এছাড়াও আমন আবাদ করা হয়েছে ৫৩ একর জমিতে। এতে করে অলস পড়ে থাকা এসব জমির আবাদ একদিকে খরা সহিষ্ণু আউশ ধান বীজের সংকট কাটাবে, অন্যদিকে বোরো আমন মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে কর্মহীন থাকা কৃষি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। খামারে অসময়ে একটি ফসল উৎপাদনে বাড়তি আয় আসবে। অন্যদিকে জমির উর্বতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে, জমিতে আগাছা কম হবে, বীজ আলু আবাদে জমির চাষ কম লাগবে, রোগ বালাই কমবে।
খামারের সহকারী পরিচালক সুব্রত মজুমদার বলেন, ‘আগে খামারে জমিতে বছরে দুইটা ফসল হতো। একটি হলো ভিত্তি বীজআলু, অপরটি গম। এখন আউশ বীজ ধান আবাদ শুরু হওয়ায় বছরে তিনটি ফসল উৎপাদন হচ্ছে।’
তিনি জানান, বর্তমানে জমির পাকা ধান কাটা-মাড়াই চলছে। ২৪০ একর জমিতে ফলন ভালো হওয়ায় ৩৫০ টন বীজ ধান উৎপাদনের আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও অবীজ ধান পাওয়া যাবে ৬০ থেকে ৭০ টন। প্রতিটন বীজ ধানের মূল্য ৫০ হাজার টাকা হিসাবে যার বিক্রয় মূল্য ২ কোটি টাকার ওপরে। অসময়ে ধান আবাদে এলাকার দুই থেকে ৩০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এতে করে একদিকে আউশ বীজ ধানের সংকট কাটবে, অন্যদিকে বোরো এবং আমন মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, খামারে অসময়ে একটি বাড়তি ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া গ্রামের কৃষক জাহেদুল ইসলাম (৫০) বলেন, খামারটি আমার বাড়ির কাছেই। সেখানে এবার প্রথম আউশ ধানের আবাদ দেখলাম। ধানের ফলন দেখে এলাকার অনেক কৃষক আউশ আবাদের দিকে ঝুকছেন।
খামারের কৃষি শ্রমিক সোনারায় ইউনিয়নের খামাতপাড়া গ্রামের রেয়াজুল ইসলাম (৩০) বলেন, ‘আমরা ২৫০ থেকে ৩০০ শ্রমিক ৫০০ টাকা দিনমজুরীতে খামারে কাজ করি। কাজ থাকলে মজুরী পাই, না থাকলে পাই না। প্রতিবছর এ সময়টাতে খামারে কোন কাজ থাকে না। ফলে অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটতো আমাদের। এবারে খামারে আউশ ধানের আবাদ হওয়ায় কাজ করতে পারছি, অভাব-অনটনও কেটে গেছে।’
ডোমার ভিত্তি বীজ আলু খামারের উপ-পরিচালক মো. আবু তালেব মিঞা বাসসকে জানান, ‘খামারে এক নাগাড়ে বীজআলু চাষ করায় রোগ নানা রোগব্যধি বাড়ছে। আউশ আবাদের পর ওই জমিতে আলু চাষ করলে ব্যাকটেরিয়া জাতীয় রোগ-বালাই কমবে। পাশাপাশি মানসম্মত আউশ বীজের সংকট কাটবে।’
তিনি জানান, আউশ আবাদে সেচ খরচ নেই বরলেই চলে। খরা সহিষ্ণু হওয়ায় বৃষ্টির পানি ছাড়া তেমন কোন সেচের প্রয়োজন হয় না, ফলন পাওয়া যায় ভালো। ১১৫ দিনের মধ্যে ধানের ফলন উঠানো যায়। ক্ষেতে আগাছা কম হয়, উঁচু জমিতে আবাদ করা সম্ভব।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রমতে, লাভজনক হলেও প্রতিবছর জেলায় কমছে আউশ ধানের আবাদ। জেলায় চলতি বছর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে। সেখানে ২০২১ সালে ১ হাজার ৬৯৫ ও ২০২০ সালে আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বাসসকে জানান,‘কৃষকরা সব সময় লাভ খোঁজে, তারা ধানের চেয়ে লাভ বেশী হওয়ায় ভুট্টা চাষ করছেন। কিন্তু আউশ আবাদে অনেক উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। সেচ খুবই কম লাগে। সে কারণে উৎপাদন খরচও কম। আউশ তুলে ওই জমিতে আগাম আলুসহ শীতকালীন সবজি চাষ করলে কৃষকরা বেশী লাভবান হবেন। আউশ ধানের আবাদ বাড়ানোর ব্যাপারে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর